ইসরাইলের হামলায় উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য: ইরান অনির্দিষ্টকালের জন্য আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা

- আপডেট সময় : ০৯:০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫ ২ বার পড়া হয়েছে
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের জেরে। শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলের বিমান হামলার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে আকাশসীমা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি।
ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানায়, “পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ইরানের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।” এরই অংশ হিসেবে তেহরানের প্রধান বিমানবন্দর ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের যাত্রী ও কার্গো ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে চলাচলকারী বহু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ইরানি আকাশপথ ব্যবহার করে, ফলে এ সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্য এবং যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থায় মারাত্মক বাধার সৃষ্টি করতে পারে।
তেহরানে বিস্ফোরণ, ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক এলাকা
ইসরাইলি হামলার পরপরই তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই এলাকায় আবাসিক ভবন ও বিভিন্ন স্থাপনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক হামলায় নিহত হয়েছেন।
‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’: ইসরাইলের দাবি ও অভিযান
ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, তারা ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে একটি পূর্বপরিকল্পিত সামরিক অভিযান চালিয়েছে। টাইমস অফ ইসরাইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং সামরিক গবেষণা কেন্দ্র।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, “এই অভিযান উচ্চমানের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
তিনি আরও জানান, অভিযানে দুই ডজনেরও বেশি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এবং এটি ছিল একেবারে নির্ভুলভাবে পরিকল্পিত ও পরিচালিত একটি অভিযানে।
নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি: “প্রয়োজনে অভিযান অব্যাহত থাকবে”
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন,
“ইরানের সামরিক হুমকি নিরসনে যতদিন প্রয়োজন অভিযান চলবে। আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার—ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও সামরিক শক্তিকে অকার্যকর করে দেওয়া।”
আইআরজিসি প্রধান নিহত হওয়ার দাবি
অভিযানে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন বলে ইসরাইলি সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া, ইরানের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সামরিক কর্মকর্তারও মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইসরাইলি নিরাপত্তা মহল।
পরিস্থিতি অশনি সংকেত দিচ্ছে
এই হামলা এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ভয়াবহ যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তেলবাহী ট্যাংকার ও বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলোকে বিকল্প রুটে যেতে বলা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, ইরান যদি প্রতিশোধমূলক হামলায় যায়, তাহলে পুরো অঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক অর্থনীতি, জ্বালানি বাজার ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও।